অন্যের সম্পদ হরণের কঠিন পরিণতি

ফাইল ছবি

 

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা গর্হিত অপরাধ। কোনো প্রকৃত মুসলমান ও রুচিশীল ভদ্র মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)

 

এ আয়াতটির এক অর্থ হচ্ছে, শাসকদেরকে উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হবার চেষ্টা করো না। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জানো এগুলো অন্যের সম্পদ, তখন শুধুমাত্র তার কাছে মালিকানার কোনো প্রমাণ না থাকার কারণে অথবা একটু এদিক-সেদিক করে কোনোভাবে প্যাঁচে ফেলে তার সম্পদ তোমরা গ্রাস করতে পারো বলে তার মামলা আদালতে নিয়ে যেয়ো না। কেননা, আদালত থেকে ওই সম্পদের মালিকানা তুমি লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তা তোমার জন্য হারামই থাকবে।

 

মহান আল্লাহ মানুষকে শুধু হালাল খাওয়ার আদেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং পবিত্র আছে, তা থেকে খাও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)

 

যে ব্যক্তি অপরের যা-ই আত্মসাৎ করবে, তা নিয়ে বিচারের মাঠে উপস্থিত হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খেয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে সে কেয়ামতের দিন সেই খেয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬১)

 

হাদিস শরিফে এসেছে, আদি ইবনে আমিরা আল-কিন্দি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি যাকে তোমাদের কোনো কাজের দায়িত্বশীল করি, অতঃপর সে সুচ পরিমাণ বস্তু বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আত্মসাৎ করল, সেটাই হবে খেয়ানত। কেয়ামতের দিন সেই বস্তু নিয়ে সে উপস্থিত হবে।’ (মুসলিম: ১৮৩৩)

 

সমাজের সবার অধিকার রয়েছে, এমন কোনো সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করত, রাসুল (স.) তার ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন। খায়বার যুদ্ধে যখন অসংখ্য সাহাবি শাহাদতবরণ করলেন, আর লোকেরা যখন বিভিন্ন লোকের শহিদ হওয়ার সংবাদ রাসুল (স.)-কে শোনাচ্ছিল, ওমর (রা.) বললেন, ‘খায়বারে অমুক অমুক শহিদ হয়েছেন।’ অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে সাহাবিরা বললেন, ‘সেও শহিদ হয়েছে।’ কিন্তু রাসুল (স.) বললেন, ‘কখনোই না; গনিমতের মাল থেকে চাদর আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি।’ (মুসলিম: ২০৯)

 

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করছে বা রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করছে সেদিন তাদের অবস্থা হবে খুবই ভীতিকর ও লজ্জাকর। অন্যের সম্পদ হরণের পার্থিব শাস্তি সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৩২৩) সূএ:ঢাকা মেইল  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» র‌্যাংকিংয়েও আফগানদের টপকে গেল টাইগাররা

» রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অপমানজনক

» নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবে: টুকু

» রাতারগুলের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার পাশে থাকবে: আসিফ নজরুল

» প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে যাচ্ছেন ৪ রাজনীতিবিদকে নিয়ে

» এবারের দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

» দুর্গাপূজায় আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি থাকতে হবে: তারেক রহমান

» পিআর দাবি জনগণের আঙ্খাকার সঙ্গে ‘মুনাফেকি’: রিজভী

» পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরী হোন: নেতা-কর্মীদের মির্জা ফখরুল

» সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

অন্যের সম্পদ হরণের কঠিন পরিণতি

ফাইল ছবি

 

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা গর্হিত অপরাধ। কোনো প্রকৃত মুসলমান ও রুচিশীল ভদ্র মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করতে নিষেধ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, এবং মানুষের ধন-সম্পত্তির কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের কাছে পেশ করো না।’ (সুরা বাকারা: ১৮৮)

 

এ আয়াতটির এক অর্থ হচ্ছে, শাসকদেরকে উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে লাভবান হবার চেষ্টা করো না। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেরাই যখন জানো এগুলো অন্যের সম্পদ, তখন শুধুমাত্র তার কাছে মালিকানার কোনো প্রমাণ না থাকার কারণে অথবা একটু এদিক-সেদিক করে কোনোভাবে প্যাঁচে ফেলে তার সম্পদ তোমরা গ্রাস করতে পারো বলে তার মামলা আদালতে নিয়ে যেয়ো না। কেননা, আদালত থেকে ওই সম্পদের মালিকানা তুমি লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তুমি তার বৈধ মালিক হতে পারবে না। আল্লাহর কাছে তা তোমার জন্য হারামই থাকবে।

 

মহান আল্লাহ মানুষকে শুধু হালাল খাওয়ার আদেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল এবং পবিত্র আছে, তা থেকে খাও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)

 

যে ব্যক্তি অপরের যা-ই আত্মসাৎ করবে, তা নিয়ে বিচারের মাঠে উপস্থিত হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খেয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে সে কেয়ামতের দিন সেই খেয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬১)

 

হাদিস শরিফে এসেছে, আদি ইবনে আমিরা আল-কিন্দি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আমি যাকে তোমাদের কোনো কাজের দায়িত্বশীল করি, অতঃপর সে সুচ পরিমাণ বস্তু বা তার চেয়ে বেশি সম্পদ আত্মসাৎ করল, সেটাই হবে খেয়ানত। কেয়ামতের দিন সেই বস্তু নিয়ে সে উপস্থিত হবে।’ (মুসলিম: ১৮৩৩)

 

সমাজের সবার অধিকার রয়েছে, এমন কোনো সম্পদ যদি কেউ আত্মসাৎ করত, রাসুল (স.) তার ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলেন। খায়বার যুদ্ধে যখন অসংখ্য সাহাবি শাহাদতবরণ করলেন, আর লোকেরা যখন বিভিন্ন লোকের শহিদ হওয়ার সংবাদ রাসুল (স.)-কে শোনাচ্ছিল, ওমর (রা.) বললেন, ‘খায়বারে অমুক অমুক শহিদ হয়েছেন।’ অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে সাহাবিরা বললেন, ‘সেও শহিদ হয়েছে।’ কিন্তু রাসুল (স.) বললেন, ‘কখনোই না; গনিমতের মাল থেকে চাদর আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি।’ (মুসলিম: ২০৯)

 

অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ভোগ করছে বা রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ করছে সেদিন তাদের অবস্থা হবে খুবই ভীতিকর ও লজ্জাকর। অন্যের সম্পদ হরণের পার্থিব শাস্তি সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৩২৩) সূএ:ঢাকা মেইল  ডটকম

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

Design & Developed BY ThemesBazar.Com